
সতর্কীকরণ! কেস রেফারেন্স ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অধিকাংশ নজীর বিভিন্ন বই ও ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই সকল নজীর এর সঠিকতার বিষয়ে কেস রেফারেন্স ওয়েবসাইট কোন নিশ্চয়তা প্রদান করে না। কেস রেফারেন্স ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নজীর এর উপর নির্ভর এর আগে সংশ্লিষ্ট নজীরটির রেফারেন্স মিলিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
আসামীপক্ষ প্রচলিত আইনে নয়, বরং ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী বিচার করার দাবি উথাপন করলে আদালতের করণীয় কি?
বিষয়টি Iftekhar Hasan (Md) @ Al Mamun vs State 59 DLR (AD) 36 মামলায় নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
দায়বর্জন বিবৃতি (DISCLAIMER)! শুধুমাত্র পাঠকের বোঝার সুবিধার্থেই বাংলা ভাষায় এই রায়টির অনুবাদ করা হয়েছে। বাংলায় অনূদিত এ রায়কে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহারিক ও সরকারি কাজে শুধুমাত্র মাননীয় আদালত প্রকাশিত ইংরেজি রায়টিকে যথার্থ বলে গণ্য করা হবে এবং রায় বাস্তবায়নের জন্য ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত রায়টিকেই অনুসরণ করতে হবে।
আপীল বিভাগ
(ফৌজদারি)
মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ জে.আর. মোদাচ্ছির হোসেন, প্রধান মাননীয় বিচারপতি
মাননীয় বিচারপতি মো. রুহুল আমিন
মাননীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম
মাননীয় বিচারপতি এম.এম. রুহুল আমিন
মাননীয় বিচারপতি মো. তাফাজ্জল ইসলাম
মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী
মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন
ফৌজদারি আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন নং ৪৪৪/২০০৬ এবং
জেল পিটিশন নং ৪, ৬, ৭, ৮, ৯ এবং ১০/ ২০০৬
(হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২৯ ও ৩১ আগস্ট ২০০৬ তারিখে ডেথ রেফারেন্স নং ৪৭/২০০৬ এবং জেল আপিল নং ৪৫৭/২০০৬ এ প্রদত্ত রায় ও আদেশ থেকে)
ইফতেখার হাসান (মোঃ) @ আল মামুন এবং অন্যান্য ------ আবেদনকারীগণ
বনাম
রাষ্ট্র ------ প্রতিপক্ষ
রায় ঘোষণার তারিখ: ২৮ নভেম্বর, ২০০৬
খলিলুর রহমান, অ্যাডভোকেট, এ.এস.এম. খালেকউজ্জামান, অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড কর্তৃক নির্দেশিত ------ আবেদনকারীগণের পক্ষে (জেল পিটিশন নং ৭, ৮ ও ৯/২০০৬)।
সালাহউদ্দিন, অ্যাডভোকেট, এ.এস.এম. খালেকউজ্জামান, অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড কর্তৃক নির্দেশিত ------ আবেদনকারীগণের পক্ষে (জেল পিটিশন নং ৪ ও ১০/২০০৬)।
শামসুল আলম, সিনিয়র অ্যাডভোকেট (সালাহউদ্দিন অ্যাডভোকেট তার সাথে), সুফিয়া খাতুন, অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড কর্তৃক নির্দেশিত ------ আবেদনকারীর পক্ষে (ফৌজদারি পিটিশন নং ৪৪৪/ ২০০৬ এবং জেল পিটিশন নং ৬/২০০৬)।
আব্দুর রেজা খান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল (হেলালউদ্দিন মোল্লা, মো. ফয়সাল এইচ খান এবং ফাহিমা নাসরিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি-জেনারেল, তার সাথে), আহসানউল্লাহ পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড কর্তৃক নির্দেশিত ------ প্রতিপক্ষের পক্ষে (সকল মামলায়)।
রায়
মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ জে.আর. মোদাচ্ছির হোসেন, প্রধান মাননীয় বিচারপতি: আমার বিজ্ঞ সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া রায় এবং আমার বিজ্ঞ সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন কর্তৃক লিখিত পৃথক ভিন্ন মত আমি পর্যালোচনা করেছি।
২. মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী ঘটনা ও পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে সকল আবেদন খারিজের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
৩. মামলার ঘটনা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আমার মতে, সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করা যায় না, কারণ আসামিদের দেশের একটি উপযুক্ত আদালত আইন অনুযায়ী এবং প্রয়োজনীয় সকল আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে প্রতিপালন করে বিচার করেছেন এবং সেই বিবেচনায় এখতিয়ারের প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক।
ফলস্বরূপ, আমিও সকল আবেদন খারিজ করছি এবং মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি।
মাননীয় বিচারপতি মো. রুহুল আমিন: আমি আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া রায় এবং আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন কর্তৃক লিখিত পৃথক নোট পর্যালোচনা করেছি এবং আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক গৃহীত ও প্রদত্ত সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করছি।
৬. আমি দুঃখিত যে, দণ্ডবিধি বা অন্য কোনো বিশেষ আইনের অধীনে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিষয়ে সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন কর্তৃক প্রকাশিত মতের সাথে আমি ভিন্নমত পোষণ করছি। যেহেতু আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পৃথক নোট সম্পর্কিত চার আসামিকে দেশের উপযুক্ত আদালত আইন অনুযায়ী বিচার করেছে, তাই আসামিদের উত্থাপিত এখতিয়ারের প্রশ্ন একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ছিল। তাছাড়া, দেশের আইনে যখন নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিধান আছে এমন অপরাধ সংঘটনের জন্য আইন অনুযায়ী কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তখন সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের 'জীবন ধারণের অধিকার' সম্পর্কিত বিধানের উল্লেখ করে তার যুক্তি আইনগতভাবে ভিত্তিহীন।
আমি আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক প্রদত্ত রায় এবং সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করছি।
মাননীয় বিচারপতি মো. ফজলুল করিম: আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন কর্তৃক সংযুক্ত নোট এবং বিচারিক আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির আপিলে উত্থাপিত যুক্তি পর্যালোচনা করেছি।
৯. যেহেতু আসামিরা এই আদালতের এখতিয়ার অস্বীকার করে কিছু ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ করে আপিলকৃত রায়ে সন্তুষ্ট থেকেছে, যা আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি আদালতের করার কিছু নেই এবং আপিলকৃত রায়ে হস্তক্ষেপ করার মতো কোনো অবৈধতা আমার পর্যালোচনায় প্রকাশ পায়নি, তাই আমার মতে, সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের বিধানের এই মামলায় কোনোভাবেই প্রয়োগযোগ্য নয়।
ফলস্বরূপ, আমি আমার বিজ্ঞ সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরীর রায় ও আদেশের সাথে একমত পোষণ করছি।
মাননীয় বিচারপতি এম.এম. রুহুল আমিন: আমি আমার বিজ্ঞ সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক প্রদত্তব্য প্রস্তাবিত রায় এবং আমার বিজ্ঞ সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন কর্তৃক সংযোজিত পৃথক নোট পর্যালোচনা করেছি এবং আমিরুল কবির চৌধুরীর রায়ের সাথে একমত পোষণ করছি।
১২. আমার মতে, মো. জয়নুল আবেদীন কর্তৃক উল্লিখিত সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের বিধান বর্তমান মামলায় প্রযোজ্য নয়, কারণ আসামিদের দেশের আইন অনুযায়ী উপযুক্ত আদালত প্রয়োজনীয় সকল আইনি আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন করে বিচার করেছেন এবং সেই কারণে আসামিদের উত্থাপিত এখতিয়ারের প্রশ্ন একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আমি আমার বিজ্ঞ সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরীর সাথে একমত পোষণ করছি।
মাননীয় বিচারপতি মো. তাফাজ্জল ইসলাম: আমি আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া রায় এবং আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন কর্তৃক সংযোজিত পৃথক নোট পর্যালোচনা করেছি এবং আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করছি, তবে এই মত প্রকাশ করছি যে, সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের অধীনে নিশ্চিতকৃত মৌলিক অধিকার এবং দণ্ডিত আসামিরা বিচারিক আদালতের এখতিয়ার না থাকার ভিত্তিতে যুক্তি উত্থাপন করায়, আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, যা এই আদালতের তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডের বৈধতা ও যথার্থতা খতিয়ে দেখা উচিত। আমি আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন কর্তৃক প্রকাশিত উপরের মতের সাথে ভিন্নমত পোষণ করছি, কারণ দণ্ডিত আসামিদের দেশের আইন অনুযায়ী উপযুক্ত আদালত বিচার করেছে, যা সেই অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখে, যে অপরাধের জন্য দণ্ডিত আসামিদের বিচার করা হয়েছে এবং তাই তারা সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের বিধানের আশ্রয় নিতে পারে না। আমি আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক প্রদত্ত রায় এবং সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করছি।
মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী: আবেদনকারী (১) মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুন জেল পিটিশন নং ৪/২০০৬ দায়ের করেছেন, আবেদন নং ৭/২০০৬ (২) শায়েখ আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ @ এহসান @ মাওলানা আব্দুর রহমানের পক্ষে, আবেদন নং ৮/২০০৬ (৩) মো. সিদ্দিকুর ইসলাম @ আজিজুল ইসলাম @ ওমর আলী @ লিটু মিয়া @ বাংলা ভাইয়ের পক্ষে, আবেদন নং ৯/২০০৬ (৪) মো. আতাউর রহমান @ তারিক সানি ইবনে আব্দুল্লাহর পক্ষে দায়ের করা হয়েছে, এবং আবেদন নং ১০/২০০৬ (৫) আব্দুল আওয়াল @ আরাফাত @ সামাদ @ আসিফের পক্ষে দায়ের করা হয়েছে, যাদেরকে পরবর্তীতে আবেদনকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২৯ ও ৩১ আগস্ট ২০০৬ তারিখে ডেথ রেফারেন্স নং ৪৭/২০০৬ এবং জেল আপিল নং ৪৫৭/২০০৬ এ উক্ত আবেদনকারীদের (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি) বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায় ও আদেশ উল্লেখিত আবেদনগুলোর জন্ম দেয়।
১৫. অন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. ফারুক হোসেন খান @ ফারুক @ খালেদ সাইফুল্লাহ @ আমজাদ উক্ত রায় ও আদেশ সম্পর্কে জেল পিটিশন নং ৬/২০০৬ দাখিল করেন, তবে পরবর্তীতে ফৌজদারি আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন নং ৪৪৪/২০০৬ দায়ের করেন এবং তার বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব এম. শামসুল আলম নতুন আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন দাখিল করার কারণে উক্ত জেল পিটিশনটি উপস্থাপন করেননি।
১৬. ঝালকাঠির অতিরিক্ত দায়রা জজ ২৯-৫-২০০৬ তারিখে দায়রা মামলা নং ২৮/২০০৬-এ উক্ত ছয় আবেদনকারী এবং পলাতক সহ-আসামি আসাদুল ইসলাম @ আরিফকে দণ্ডবিধির ১২০বি এবং ৩২৪/৩০২/৩৪ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। অন্য আসামি মো. সুলতান খানকে খালাস দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত দায়রা জজ উক্ত রায় প্রদানের পর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারার অধীনে হাইকোর্ট বিভাগে কার্যক্রম প্রেরণ করেন, যার ভিত্তিতে ডেথ রেফারেন্স নং ৪৭/২০০৬ শুরু হয়। বিচারিক আদালতের উক্ত রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুন @ শিহাব উক্ত জেল আপিল নং ৪৫৭/২০০৬ দায়ের করেন। ডেথ রেফারেন্স এবং উক্ত জেল আপিল একত্রে শুনানি করে হাইকোর্ট বিভাগ আপিলকৃত রায় ও আদেশে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করেন এবং জেল আপিল খারিজ করেন।
১৭. মো. আব্দুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ বিন ফজল তার দীর্ঘ আবেদনে উল্লেখ করেন, "আজ আমাদের দেশে নবী (সঃ) এর বিচার পরিহার করে মুসলমানরা কাফেরদের তৈরি বিচার প্রার্থী হচ্ছে।
অতএব যারা মানুষের তৈরি করা সংবিধান, বিধান বা আইনের কাছে বিচার প্রার্থী হয় তারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবি করলেও তারা ইমানদার নয় বলে উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহতা’লা জানিয়ে দিয়েছেন। কাজেই যদি কেহ ঈমান বিধ্বংসী কাজ করে তবে মুসলিম দাবি করলেই তারে রেহাই দেয়া যাবে না।
এ থেকে এদেশের নির্যাতিত মুসলিম জনগণকে মুক্ত করার জন্য ১৫০ (দেড়শত) বৎসর পর আবারো জামা’আতুল মুজাহিদীন” বাংলাদেশ। এদেশে আল্লাহর আইনকে বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহর নির্দেশিত সশস্ত্র জিহাদ শুরু করেছে, আলহামদুল্লিাহ। জে,এম,বি, এর মাত্র দুই একশত মুজাহিদের ফাঁসিতেই এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না, আল্লাহ চাচ্ছেন আরো কিছু আল্লাহর বান্দা তাঁর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনদান করুক তারপর তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে এ দেশে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।”
মো. সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই তার আবেদনে উল্লেখ করেন, "আমি ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিচার করিলে আপীল করিব।“আল্লাহ বলেন : তুমি কি তাহাদিগকে দেখ নাই যাহারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে এবং তোমার পূর্বে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহাতে তাহারা বিশ্বাস করে, অথচ তাহারা তাগুতের কাছে বিচার প্রার্থী হইতে চায়, যদি উহা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাহাদিগকে নিদের্শ দেয়া হইয়াছে এবং শয়তান তাহাদিগকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করিতে চায়।” (সুরা নিসা-৬০) আমি একজন মুসলিম হিসেবে বিচারের শুরু হতে কোরআন ও হাদিস দ্বারা আমার বিচার করার আহ্বান করেছি কিন্তু তাগুতের তলপী বাহক বিচারক তা না করে বরং বৃটিশের গোলাম বানানো আইনে বিচার করে আমার মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেন : বিধান দিবার অধিকার কেবল আল্লাহর (সূরা ইউসুফ-৪০)। তাই মুসলিম হিসেবে এ আইনে বিচার প্রার্থী হলে ঈমান থাকবে না। আমি কোর্টে আপীল করিব না।
আবেদনকারী আব্দুল আওয়াল তার আবেদনে উল্লেখ করেন, “আমার বিরুদ্ধে, যে মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে, সে বিষয় হতে আমি সম্পূর্ণ নিজেকে নির্দোষ মনে করি। আমি আপীল করতে চাই, যদি আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয় এবং ইসলাম অনুযায়ী বিচার করা হয়।
আমি আশা করি, উচ্চ আদালতে উপস্থিত হয়ে, আত্মপক্ষ সমর্থন ও ইসলাম অনুযায়ী বিচার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে আমাকে। এ ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে, আল্লাহর নিকট প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধারণ করব ইনশাআল্লাহ।
আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করার বিরুদ্ধে মহামান্য উচ্চ আদালতে লিভ টু আপীল করতে ইচ্ছুক, যদি আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয় এবং ইসলামী বিধান অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করা হয়।”
আবেদনকারী আব্দুল আওয়াল তার আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, “অতএব আমার মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকরী করার বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে ইসলামী জুরি বোর্ড গঠন করে আল্লাহর আইনে পুনরায় বিচার করার আবেদন করছি অন্যথায় সম্ভব না হলে আমার বিচার তাগুতি আইনে না করার আবেদন করছি।”
১৮. অন্য আসামি মো. ফারুক হোসেন খান আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন দাখিল করে তার দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডের আপিলকৃত রায় ও আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং তার পক্ষে তার বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব এম. শামসুল আলম প্রতিনিধিত্ব করছেন।
১৯. সংক্ষিপ্তভাবে রাষ্ট্রপক্ষের মামলাটি হলো, ১৪-১১-২০০৫ তারিখে সকাল ৮:৫০ মিনিটে ঝালকাঠি বিচার বিভাগের গাড়িচালক মো. সুলতান আহমেদ খান (সাক্ষী ১) যথারীতি গাড়িটি বের করে বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে, সোহেল আহমেদ এবং অন্যান্যদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হন এবং সেই অনুযায়ী তিনি উক্ত দুইজন বিচারককে গাড়িতে তোলেন এবং আব্দুল মান্নান হাওলাদার (সাক্ষী ১৪) নামে একজন পিয়নকেও গাড়িতে নেন এবং তাদের নিয়ে তিনি অন্য একজন বিচারক জনাব আব্দুল আওয়ালকে নিতে যান এবং জনাব আওয়ালের গেটে গাড়ি থামান এবং যখন তিনি জনাব আওয়ালকে ডাকছিলেন তখন তিনি একটি বিশাল ভয়ানক শব্দ শুনতে পান এবং জনাব আওয়ালের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে তিনি দেখেন গাড়িটি টুকরো টুকরো হয়ে গেছে এবং বিচারক সোহেল আহমেদকে গাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, অন্য বিচারক জগন্নাথ পাঁড়েকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং তিনি মান্নান (সাক্ষী ১৪) এবং বাদশা মিয়া (সাক্ষী ১১) নামে অন্য একজন ব্যক্তিকেও আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এবং তিনি অন্য একজন লোককে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন এবং আহত ব্যক্তিদের রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি পুলিশকে ঘটনাটি বর্ণনা করেন এবং অন্য আহত ব্যক্তি সম্পর্কে জানান যে, ঘটনার ঠিক আগে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে দেখেছিলেন এবং পরে তার কাছ থেকে কোরআনের আইন প্রবর্তনের দাবি সম্বলিত কিছু লিফলেট উদ্ধার করা হয় এবং পিয়ন মান্নান সাক্ষী ১ কে জানান যে, উক্ত আহত ব্যক্তি বিচারক সোহেল আহমেদকে একটি কাগজ দেখিয়েছিলেন এবং ঠিকানা সংগ্রহের অজুহাতে কাগজটি দেওয়ার সুযোগ নিয়ে মামুন নামে উক্ত ব্যক্তি গাড়ির জানালা দিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং বাদশা ও মান্নান (সাক্ষী ১১ এবং ১৪) আহত হন এবং বিচারক সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে নিহত হন। এই সাক্ষীর বক্তব্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মামুন এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে ১৪-১১-২০০৫ তারিখে ঝালকাঠি থানার মামলা নং ১২ দায়ের করা হয়।
২০. তদন্তকালে আসামি (১) শায়েখ আব্দুর রহমান, (২) মো. সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, (৩) মো. আতাউর সানি, (৪) আব্দুল আওয়াল, (৫) মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুন এবং (৬) সুলতান খানকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, আলামত জব্দ করেন এবং সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
২১. ২৪-১১-২০০৫ তারিখে আসামি মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুনকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো. শফিক আনোয়ারের (সাক্ষী ৪১) সামনে হাজির করা হয়, যার নিকট আসামি একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, যা উক্ত বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রেকর্ড করেন। তদন্ত শেষে সাক্ষী ৪৪ মুন্সি আতিকুর রহমান ২১-৩-২০০৬ তারিখে আবেদনকারী এবং পলাতক আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফ এবং মো. সুলতান খানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৩২৬/৩০২/৪২৭/১০৯/৩৪ ধারার অধীনে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হলে ঝালকাঠির দায়রা জজের আদালতে দায়রা মামলা নং ২৮/২০০৬ হিসাবে নথিভুক্ত করা হয় এবং বিচারের জন্য অতিরিক্ত দায়রা জজের কাছে স্থানান্তরিত করা হয়।
২২. বিচারিক আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৩০২/৩৪ এবং ৩২৬ ধারার অধীনে অভিযোগ গঠন করেন। সহ-আসামি মো. ফারুক হোসেন খান @ ফারুক @ খালেদ সাইফুল্লাহ @ আমজাদ এবং আসামি আরিফ তখন পলাতক থাকায় তাদের জবানবন্দি নেওয়া যায়নি, অন্য আসামিদের জবানবন্দি নেওয়া হয়।
২৩. আসামি (১) শায়েখ আব্দুর রহমান, (২) মো. সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, (৩) মো. আতাউর রহমান সানি, (৪) আব্দুল আওয়াল এবং (৫) মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুন অভিযোগের জবাবে সরাসরি অভিযোগ অস্বীকার করেননি এবং আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার দাবি করেন। আসামি সুলতান খান (যিনি খালাস পেয়েছেন) সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেন এবং বিচার দাবি করেন।
২৪. স্থানীয় বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জনাব মো. সিদ্দিক হোসেনকে সকল আসামির প্রতিনিধিত্ব করার জন্য রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়, কারণ তারা তাদের পছন্দের কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেননি। বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ ৪৪ জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করে, তবে আসামিপক্ষ কোনো সাক্ষীকে উপস্থাপন করেনি। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এটি এমন একটি মামলা যেখানে আবেদনকারীরা নির্দোষিতার দাবি তোলেননি, বরং তারা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের বর্তমান আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার দাবি করেন।
২৫. সাক্ষী ১ মো. সুলতান আহমেদ খান, ঝালকাঠি বিচার বিভাগের গাড়িচালক, মামলার বাদী, যিনি তার জবানবন্দিতে রাষ্ট্রপক্ষের মামলার বর্ণনায় ইতিমধ্যে উল্লিখিত ঘটনার বর্ণনা দেন। তার জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের সময় দুইজন বিচারক নিহত হন এবং মান্নান ও বাদশা নামে অন্য দুইজন আহত হন। তিনি আরও জবানবন্দি দেন যে, ঘটনার আগে তিনি হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে অন্য একজন আহত ব্যক্তিকে দেখেন এবং ঘটনার পরে তার কাছ থেকে কিছু লিফলেট উদ্ধার করা হয়, যেখানে লেখা ছিল "মানব রচিত আইন মানি না, কোরআনের আইন চালু কর" এবং তার কাছে কিছু বোমাও পাওয়া যায় এবং পরে তার নাম মামুন বলে জানা যায়। সাক্ষী কাঠগড়ায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবেদনকারী মামুনকে শনাক্ত করেন। তিনি তার দায়ের করা এজাহারও প্রমাণ করেন। জেরা করার সময় তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি আগে থেকে আসামি মামুনকে চিনতেন না।
২৬. সাক্ষী ২ আব্দুল বারেক খান, ঘটনাস্থলের কাছে একটি দোকানের দোকানদার, জবানবন্দি দেন যে, ২০০৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে তিনি একজন লোককে মধু বিক্রি করতে দেখেন এবং জিজ্ঞাসায় লোকটি তার নাম মেহেদী বলে জানায় এবং প্রায়ই তার দোকানে আসত এবং মেহেদী তাকে বলে যে, সে একটি ইসলামী দলের সাথে জড়িত এবং ক্রমাগত আলোচনার মাধ্যমে সাক্ষীও ইসলামী দলের প্রতি আগ্রহী হন এবং আগ্রহ দেখে সাক্ষীকে রূপাতলী লালদিঘীর পাড়ে মৃধার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তিনি সেখানে গিয়ে উক্ত মেহেদীকে অন্যদের সাথে দেখতে পান এবং এরপর একসময় মেহেদী সাক্ষীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নেন এবং সাক্ষী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে টাকার জন্য মৃধা বাড়ির উক্ত বাড়িতে যান এবং মেহেদীকে অন্য কয়েকজনের সাথে রাত ১০:০০/১০:৩০ টার দিকে বাড়িতে আসতে দেখেন এবং তিনি অন্যদের মধ্যে আসামি মামুন (জেল পিটিশন নং ৪/২০০৬ এর আবেদনকারী) এবং আরিফকে (পলাতক আসামি) দেখতে পান এবং সাক্ষীকে বলা হয় যে, ইসলামী দলের নেতারা, যাদের কথা সাক্ষীকে আগে বলা হয়েছিল, তারা বাড়িতে আসবেন এবং সাক্ষীকে অপেক্ষা করতে বলা হয় এবং সেই অনুযায়ী তিনি সেখানে অপেক্ষা করেন এবং রাত ১২:০০ থেকে ১২:৩০ টার দিকে অন্য পাঁচজন লোক আসেন এবং জিজ্ঞাসায় মেহেদী তাদের নাম জানান ১) শায়েখ আব্দুর রহমান, (২) মো. সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, (৩) মো. আতাউর রহমান @ তারিক সানি, (৪) আব্দুল আওয়াল এবং (৫) আমজাদ @ খালেদ সাইফুল্লাহ (যথাক্রমে জেল পিটিশন নং ৭/২০০৬, ৮/২০০৬, ৯/২০০৬, ১০/২০০৬ এবং দেওয়ানি পিটিশন নং ৪৪৪/২০০৬ এর আবেদনকারী)। এরপর আরও কয়েকজন লোক আসেন এবং একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষী সভাটির বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দি দেন, "মিটিং এ বসিয়া শায়খ আবুদর রহমান বাংলা ভাই বলেন যে, ইসলামী আইন বাস্তবায়নের জন্য ১৭ আগষ্ট সারা দেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হইয়াছে তাহাতেও সরকারের টনক নড়ে নাই। তখন বলে যে, এখন হইতে জজ, পুলিশ প্রশাসন-এর উপর বোমা হামলা করা হইলে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন সহজ হইবে। আতাউর রহমান সানি এবং আব্দুল আউয়াল তখন আমজাদকে বলে যে, আমজাদ ভাই আপনি বরিশাল বিভাগ-এর প্রধান। আপনি বলুন যে, কোথায় বোমা হামলা করা সহজ হইবে। জবাবে আমজাদ ভাই বলেন যে, সে সব জায়গা ঘুরিয়া দেখিয়াছে বরিশাল বিভাগে ঝালকাঠি এবং বরগুনায় বোমা হামলা করা সহজ হইবে। তখন শায়খ আবদুর রহমান সুযোগ মত বোমা হামলা করার জন্য আমজাদকে নির্দেশ দেয়। ১/২ ঘন্টার বেশি মিটিং করিয়া নেতৃবৃন্দরা চলিয়া যায়।”
২৭. সাক্ষী কাঠগড়ায় উপস্থিত উক্ত পাঁচ আসামিকে শনাক্ত করেন, অর্থাৎ আবেদনকারী মামুন ছাড়া বর্তমান আবেদনকারীদের। তিনি আরও জবানবন্দি দেন যে, পত্রিকায় বোমা বিস্ফোরণে দুইজন বিচারকের মৃত্যুর খবর পড়েন। সেখানে মামুনের ছবি দেখে তিনি সহজেই চিনতে পারেন যে, উক্ত ব্যক্তিও উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং কাঠগড়ায় উক্ত মামুনকে শনাক্ত করা হয়। জেরা করার সময় তিনি স্বীকার করেন যে, সভার কার্যক্রম রেকর্ড করা হয়নি। তিনি অস্বীকার করেন যে, তিনি শায়েখ আব্দুর রহমানকে সভায় দেখেননি বা তিনি সভায় উপস্থিত ছিলেন না। জেরা করার সময় তিনি আরও জানান যে, তিনি বাংলা ভাইকে সভায় দেখেছেন। সভার তারিখ তার মনে নেই। জেরা করার সময় তিনি বলেন, মামুন এবং (১) শায়েখ আব্দুর রহমান, (২) বাংলা ভাই, (৩) মো. আতাউর রহমান @ তারিক ইবনে আব্দুল্লাহ সানি, (৪) আব্দুল আওয়াল, (৫) মো. ইফতেখার হাসান @ আল মামুন এবং (৬) মো. ফারুক হোসেন খান @ ফারুক @ খালেদ সাইফুল্লাহ @ আমজাদ (অন্য সকল ছয় আবেদনকারী) সহ ১০/১২ জন লোক সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি অস্বীকার করেন যে, তিনি আসামিদের সভায় দেখেননি বা মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন।
২৮. সাক্ষী ৩ মো. আবুল খায়ের জবানবন্দি দেন যে, তিনি রূপাতলী মৃধা বাড়িতে অবস্থিত একটি মসজিদের ইমাম এবং ২০০৫ সালের মার্চ মাসে মাওলানা মিরাজ তার কাছে "টু-লেট" সাইনবোর্ড ঝুলানো বাড়ির মালিক সম্পর্কে তথ্য জানতে আসেন এবং উত্তরে তিনি জানান যে, বাড়ির মালিক ঢাকায় থাকেন এবং মো. নাজমুল হুদা লিটন (সাক্ষী ৭) তত্ত্বাবধায়ক এবং তারপর তিনি লোকটির সাথে লিটনের কাছে যান এবং বাড়িটি মাসিক ১০০০ টাকা ভাড়ায় উক্ত ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয় এবং মাওলানা মিরাজের সাথে আসা অন্য ব্যক্তির নাম মেহেদী বলে জানা যায় এবং তারা প্রায় দেড় মাস বাড়িতে ছিলেন এবং তিনি লিটনের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, পরে তারা ভাড়া না দিয়ে পালিয়ে যায় এবং ঝালকাঠিতে বোমা হামলার ঘটনার পর পুলিশ মামুনকে উক্ত বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তাকে দেখে সাক্ষী উক্ত ব্যক্তিকেই ভাড়া করা বাড়ির বাসিন্দাদের একজন হিসেবে শনাক্ত করতে পারেন। জেরা করার সময় তিনি বলেন যে, ঘটনার আগে তিনি মামুনকে ৩ থেকে ৪ বার দেখেছেন এবং মামুনকে দেখেননি বা তিনি নিজে জেএমবির সদস্য ছিলেন এবং তিনি বিচারকদের হত্যা করার জন্য আসামিদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, এই সাজেশন অস্বীকার করেন।
২৯. সাক্ষী ৪ পল্লবী মুখার্জী নিহত বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ের স্ত্রী, যিনি রাষ্ট্রপক্ষের মামলার বর্ণনা দেন এবং তাকে জেরা করা হয়নি।
৩০. সাক্ষী ৫ রওশন আরা বেগম জবানবন্দি দেন যে, শাওন নামে একটি ছেলে তার বাড়ি ভাড়া নেয় এবং তার সাথে শিহাব @ মামুন নামে অন্য একটি ছেলে তার বাড়িতে থাকত এবং ২৫ রমজানের পর উক্ত শিহাব @ মামুনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং জিজ্ঞাসায় শাওন তাকে জানায় যে, মামুন তার অসুস্থ বাবাকে দেখার জন্য বাড়িতে গেছে। তিনি আরও জবানবন্দি দেন যে, দুইজন বিচারকের হত্যার ঘটনায় পুলিশ তার বাড়িতে যায় এবং শিহাব @ মামুনকে দেখায়, যাকে তিনি তার বাড়িতে বসবাসকারী মামুন হিসেবে শনাক্ত করেন এবং কাঠগড়ায় আসামি মামুনকেও শনাক্ত করেন।
৩১. সাক্ষী ৬ মো. সিরাজুল ইসলাম, রূপাতলী জামে মসজিদের ইমাম, তার সাক্ষ্যে রূপাতলী লালদিঘী মৃধা বাড়িতে শাওনের কাছে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে সাক্ষী ৩ মো. আবুল খায়েরের জবানবন্দিকে সমর্থন করেন।
৩২. সাক্ষী ৭ মো. নাজমুল হুদা লিটন তার সাক্ষ্যে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে সাক্ষী ৫ কে সমর্থন করেন এবং কাঠগড়ায় আসামি মামুনকে শনাক্ত করেন।
৩৩. সাক্ষী ৮ উত্তম কুমার দাস তার জবানবন্দিতে আসামি মামুনকে মৃধা বাড়িতে বসবাসকারী ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করেন এবং কাঠগড়ায়ও তাকে শনাক্ত করেন।
৩৪. সাক্ষী ১১ বাদশা মিয়া বিভিন্ন বাড়িতে দুধ বিক্রি করেন। তিনি জবানবন্দি দেন যে, ১৪-১১-২০০৫ তারিখে সকাল ৮:৪৫ টার দিকে বিচারক আব্দুল আওয়ালের বাড়িতে এবং একজন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে দুধ দিয়ে ফেরার সময় তিনি বিচারক আব্দুল আওয়ালের বাড়ির সামনে একজনকে কথা বলতে দেখেন এবং মান্নান (সাক্ষী ১৪) ও বিচারক আব্দুল আওয়ালের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তিনি হঠাৎ শব্দ শুনতে পান এবং সেখানে বিস্ফোরিত বোমার স্প্লিন্টারে তিনি আহত হন এবং আহত অবস্থায় তাকে ঝালকাঠি এবং সেখান থেকে বরিশাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বিচারক আব্দুল আওয়ালের বাড়ির সামনে হাতে ব্যাগ নিয়ে যে লোকটিকে তিনি দেখেছিলেন তার নাম মামুন এবং তিনি তাকে কাঠগড়ায় শনাক্ত করেন। জেরা করার সময় তিনি উত্তর দেন যে, মামুন ছাড়া তিনি অন্য আসামিদের চিনতেন না।
৩৫. সাক্ষী ১২ মো. শামীম বাহার সাক্ষী ২ এর জবানবন্দিকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করে জবানবন্দি দেন, "ইসলামী দলের নেতারা আসিলে আমাকে পরিচয় করাইয়া দিবে বলিয়া বলে এবং আমাকে থাকিতে বলে। কিছুক্ষণ পরে নেতৃবৃন্দ আসে তাহাদের নাম শেখ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আব্দুল আউয়াল, আমজাদ ওরফে খালেদ সফিউল্লা। আমজাদ বরিশাল বিভাগের নেতা। কিছু সময় পরে আরেকজন লোক আসে। তাহার নাম মোল্লা ওমর। কিছু সময় পরে মিটিং শুরু হয়। মিটিং এ শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাই বলে যে সারা দেশে ইসলামী আইন চালূর জন্য যে বোমা হামলা হইয়াছে তাহাতে সরকারের কোন চেতনা হয় নাই। এখন হইতে জজ, ম্যাজিষ্ট্রেটদের উপর এবং আদালতে বোমা হামলা করিলে সরকারের চেতনা হইবে বলিয়া তাহারা বলে। সানি ও আউয়াল তখন আমজাদকে জিজ্ঞাসা করে যে বরিশাল বিভাগে কোন জায়গায় বোমা হামলা করা সহজ হইবে ? তখন আমজাদ সাহেব বলে যে, সে সারা বিভাগ ঘুরিয়া দেখিয়াছে। ঝালকাঠি বা বরগুনা জেলায় বোমা মারা সহজ হইবে। তখন শেখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাই ইহারা আমজাদ সাহেবকে নির্দেশ দেয় তাহারা সুবিধা মত ঝালকাঠি বা বরগুনায় বোমা হামলা করার জন্য। তাহার পর আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই প্রমুখ চলিয়া যায়। শেখ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, মামুন, আউয়াল, আমজাদ ইহারা কাঠগড়ায় আছে।”
৩৬. এই সাক্ষীকে কেবল এই জেরা করা হয়েছিল "আমি যে মিটিং এ উপস্থিত ছিলাম তাহার তারিখ আমি বলিতে পারি না।" তাই, তার সাক্ষ্য অপরিবর্তিত থাকে এবং আসামিদের দ্বারা গৃহীত হিসাবে বিবেচিত হয়।
৩৭. সাক্ষী ১৪ আব্দুল মান্নান হাওলাদার তার জবানবন্দিতে সাক্ষী ১১ বাদশা মিয়ার সাক্ষ্য সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেন এবং জবানবন্দি দেন যে, আসামি মামুনের হাতে একটি ব্যাগ ছিল, যা সে বিচারক সোহেল আহমেদকে একটি কাগজ দেখায় এবং তারপর বিচারকদের বহনকারী গাড়ির ভিতরে ব্যাগটি ছুড়ে মারে, যার ফলে বোমা বিস্ফোরিত হয় এবং তিনি স্প্লিন্টারে আহত হন এবং বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ নিহত হন।
৩৮. সাক্ষী ১৬ মো. সাবির হোসেন চাঁদকাঠি ইবাদুল্লাহ মসজিদের কাছে একটি দোকানের মালিক, যিনি জবানবন্দি দেন যে, ১৪-১১-২০০৫ তারিখে সকাল ৮ থেকে ৮:১৫ টার দিকে যখন তিনি তার দোকানে বসে ছিলেন, তখন হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে একজন লোক সেখানে আসে এবং তার কাছ থেকে কলা ও রুটি কেনে এবং সাক্ষী তার ভাই মো. জুবায়ের সাক্ষী ১৭ কে দোকানে রেখে যান, লোকটির কাছ থেকে ৮ টাকা নিতে বলেন এবং কিছুক্ষণ পর তিনি একটি বড় শব্দ শুনতে পান, যা শুনে তিনি তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং বিচারক আব্দুল আওয়ালের বাড়ির সামনে অনেক লোককে দেখেন এবং পরে পত্রিকায় দেখেন যে, বিচারক সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন এবং বাদশা আহত হয়েছেন এবং অন্য আহত ব্যক্তির ছবি দেখে তিনি তাকে সেই ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করেন, যিনি তার কাছ থেকে কলা ও রুটি কিনেছিলেন এবং উক্ত ব্যক্তিকে আসামি মামুন হিসেবে শনাক্ত করা হয়, যাকে তিনি কাঠগড়ায় শনাক্ত করেন।
৩৯. সাক্ষী ৪১ মো. শফিক আনোয়ার, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, জবানবন্দি দেন যে, ২৪-১১-২০০৫ তারিখে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার অধীনে আসামি মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
৪০. সাক্ষী ৪৪ মুন্সি আতিকুর রহমান, তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪১. সাক্ষ্য গ্রহণের পর, বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে আসামি আবেদনকারীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। উত্তরে আবেদনকারী শায়েখ আব্দুর রহমান বলেন, "আমরা বাংলাদেশ-এর প্রচলিত আইন মানি না। আমি আল্লাহর আইনে বিচার চাই। আমার মতে আমি নির্দোষ। আমরা এ দেশের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আমরা এদেশের বিচারক, পুলিশ এদের হত্যার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়াছি। আমি আল্লাহর নির্দেশনা মতে দল গঠন করেছি ও হত্যার নির্দেশ দিয়াছি।”
৪২. একইভাবে, আসামি সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই বলেন যে, তিনি জেএমবির সদস্য হতে পেরে গর্বিত এবং তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেননি। আসামি খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, "এ দেশের সরকারে যারা অধিষ্ঠিত তাদের সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ করে ইসলামী আইন চালুর চেষ্টা করেছি পরে আমরা সশস্ত্র জিহাদ এর পথ অবলম্বন করেছি। শায়েখ আব্দুর রহমান এর নির্দেশে আমি ঝালকাঠিতে বোমা হামলার সংঘটন ও দুইজন বিচারক হত্যা করতে পেরে আমি গর্বিত।”
৪৩. আসামি মামুন তার জবানবন্দিতে স্বীকার করেন যে, শায়েখ আব্দুর রহমানের নির্দেশে এবং খালেদ সাইফুল্লাহর নেতৃত্বে তিনি দুইজন বিচারককে হত্যা করেন।
৪৪. মো. আতাউর রহমান সানিও তার জবানবন্দিতে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা অস্বীকার করেননি এবং বলেন যে, দেশে দুর্নীতি ও ইসলামী আইনের অনুপস্থিতির কারণে তিনি জিহাদ করতে বাধ্য হন। আসামি আব্দুল আওয়াল বলেন যে, তিনি একজন মুসলিম মুজাহিদ এবং তার ঈমানের দাবি পূরণের জন্য তিনি এই পথ বেছে নেন।
৪৫. বিচার শেষে, বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ২৯-৫-২০০৬ তারিখে দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডের রায় রেকর্ড করেন, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪৬. তাই এই আবেদনগুলো করা হয়েছে।
৪৭. জনাব খলিলুর রহমান, বিজ্ঞ রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি (১) শায়েখ আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ @ ঈসা @ মাওলানা আব্দুর রহমান, (২) মো. সিদ্দিকুল ইসলাম প্রামাণিক/ওরফে আজিজুল ইসলাম/ওরফে ওমর আলী ওরফে লিটু মিয়া ওরফে বাংলা ভাই এবং (৩) মো. আতাউর রহমান ওরফে তারিক সানি ইবনে আব্দুল্লাহ কর্তৃক দায়েরকৃত জেল পিটিশন নং ৭, ৮ এবং ৯/২০০৬-এ আবেদনকারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন।
৪৮. আপিলকৃত রায়সহ নথিতে থাকা উপাদানগুলো উপস্থাপন করে, বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন যে, আবেগ দ্বারা আবেদনকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তাদের দোষী সাব্যস্ত করার মতো কোনো প্রমাণ নেই।
৪৯. তিনি আরও বলেন যে, তার মক্কেলদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাক্ষীরা যোগাড় করা সাক্ষী এবং তারা প্রকৃতপক্ষে কোনো ঘটনা দেখেননি এবং পুলিশের নির্দেশে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন। তার মক্কেলদের সাক্ষীদের জেরা করতে এবং/অথবা রাষ্ট্রপক্ষের মামলা সরাসরি অস্বীকার করতে কী বাধা দিয়েছিল, এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে, বিজ্ঞ আইনজীবী উত্তর দিতে অসুবিধা বোধ করেন এবং অবশ্যই বলেন যে, বিচারিক আদালতে আবেদনকারীদের সঠিকভাবে রক্ষা করা হয়নি।
৫০. তবে তিনি বলেন যে, এই আদালত দেশের সর্বোচ্চ আদালত হওয়ায় ঘটনা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে এবং আবেদনকারীদের খালাস দিতে পারে, কারণ তাদের বিরুদ্ধে কোনো জোরালো প্রমাণ নেই।
৫১. জনাব সালাহউদ্দিন, বিজ্ঞ আইনজীবী, মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুন এবং মো. আব্দুল আওয়াল @ আরাফাত @ সামাদ @ আসিফ কর্তৃক দায়েরকৃত জেল পিটিশন নং ৪/২০০৬ এবং ১০/ ২০০৬-এ আবেদনকারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন।
৫২. তিনি জনাব খলিলুর রহমানের বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং বলেন যে, আবেদনকারীদের পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা দেওয়া হয়নি এবং তাই বিচারিক আদালতে মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয়নি।
৫৩. তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার করার এখতিয়ারে এই আদালত উপাদানগুলো খতিয়ে দেখতে পারেন, যা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করলে প্রকাশ পাবে যে, প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে সন্দেহের বাইরে মামলা প্রমাণ করতে পারেনি এবং তাই তারা খালাস পাওয়ার অধিকারী।
৫৪. জনাব এম. শামসুল আলম, বিজ্ঞ আইনজীবী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. ফারুক হোসেন খান @ ফারুক @ খালেদ সাইফুল্লাহ @ আমজাদ কর্তৃক দায়েরকৃত ফৌজদারি আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন নং ৪৪৪/২০০৬-এ আবেদনকারীর পক্ষে উপস্থিত হয়ে আপিলকৃত রায়টি আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন এবং বলেন যে, দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে তার মক্কেলকে অভিযুক্ত করার জন্য কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ নেই এবং তাই তিনি উক্ত অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ খালাস পাওয়ার অধিকারী।
৫৫. দণ্ডবিধির ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্তকরণের বিষয়ে বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন যে, রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক উপস্থাপিত ৪৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দুইজন সাক্ষী, যথা সাক্ষী ২ মো. আনিসুর রহমান এবং সাক্ষী ১২ মো. শামীম বাহার, তার মক্কেলের ফৌজদারি ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণের বিষয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন, তবে উক্ত দুইজন সাক্ষী স্বাভাবিক সাক্ষী নন এবং প্রকৃতপক্ষে তারা পুলিশের দ্বারা যোগাড় করা সাক্ষী এবং রাষ্ট্রপক্ষ সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, তার মক্কেল দুইজন বিচারকের কথিত অপরাধ সংঘটনের জন্য কোনো ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন এবং তাই তার মক্কেলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্তকরণ কোনোভাবেই বহাল রাখা যায় না।
৫৬. তিনি এরপর বলেন যে, আসামিপক্ষ সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় আবেদনকারী পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
৫৭. ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তার মক্কেলের পরীক্ষার জবানবন্দির উল্লেখ করে, বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন যে, জবানবন্দির দোষ স্বীকারমূলক অংশ কোনো অবস্থাতেই তার দোষী সাব্যস্তকরণের ভিত্তি হতে পারে না এবং অভিযুক্তের কথিত জবানবন্দি ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষকে সন্দেহাতীতভাবে অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করে অভিযোগ প্রমাণ করতে বাধ্য এবং বর্তমান মামলায়, বিজ্ঞ আইনজীবীর মতে, রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ উপস্থাপনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাই দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডের আদেশ বাতিল হওয়ার যোগ্য।
৫৮. তিনি আরও বলেন যে, স্বীকৃতভাবে আবেদনকারীর নাম এফআইআর-এ নেই এবং উক্ত এফআইআর-এ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
৫৯. বিজ্ঞ আইনজীবীর মতে, দুইজন বিচারকের কথিত হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার বিষয়ে একজন সাক্ষীও আবেদনকারীর বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেননি এবং তাই দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্তকরণ অবিলম্বে বাতিল হয়ে যায়।
৬০. আবেদনকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগের বিষয়ে, বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন যে, রাষ্ট্রপক্ষের মতেও সাক্ষী ২ মো. আনিসুর রহমান এবং সাক্ষী ১২ মো. শামীম বাহার এই বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক উপস্থাপিত একমাত্র সাক্ষী।
৬১. তিনি এরপর বলেন যে, সাক্ষী ২ বরিশালের বাসিন্দা এবং সাক্ষী ১২ ঝালকাঠির বাসিন্দা এবং তাদের উভয়কেই পুলিশ আবেদনকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যোগাড় করেছে।
৬২. তিনি কথিত ষড়যন্ত্রের ঘটনাস্থল (পিও) অনুসন্ধানে তদন্তকারী সংস্থার ব্যর্থতার অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং বলেন যে, বিচারকদের হত্যার ষড়যন্ত্রের মতো গুরুতর প্রকৃতির সভায়, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় যে, দুই বহিরাগত অর্থাৎ সাক্ষী ২ এবং ১২ কে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হবে এবং তাই তাদের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য নয় এবং তাদের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করে আবেদনকারীকে কথিত ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যায় না এবং তাই দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডের আদেশ বাতিল হওয়ার যোগ্য।
৬৩. রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল জনাব আব্দুর রেজা খান, বলেন যে, অভিযোগের জবাবে আবেদনকারীদের বক্তব্য, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তাদের বক্তব্য এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবেদনকারী মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুনের (জেল পিটিশন নং ৬/২০০৬ এর আবেদনকারী) দোষ স্বীকার করে বক্তব্য, দেশের বিদ্যমান আইন অস্বীকার করা এবং এমনকি দেশের আদালতের এখতিয়ার অস্বীকার করার পরিপ্রেক্ষিতে, সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার করার জন্য এই আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে উত্থাপিত আবেদনটি উত্থাপিত হয় না।
৬৪. সংবিধানের ১০৩ এবং ১০৪ অনুচ্ছেদের বিধান উপস্থাপন করে, বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল বলেন যে, আপিলকৃত রায়ে আইনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রশ্ন জড়িত থাকলে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করা হয়।
৬৫. তিনি আরও বলেন যে, আবেদনকারীদের (ফৌজদারি পিটিশন নং ৪৪৪/২০০৬ এবং জেল পিটিশন নং ৪/২০০৬ এর আবেদনকারী ছাড়া) এই আদালতের এখতিয়ার অস্বীকার করার স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকায় এই আদালতের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার পাওয়ার আবেদন উত্থাপনের প্রশ্নই আসে না এবং নথিতে থাকা উপাদানগুলো উল্লেখ করে, বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল বলেন যে, এই ধরনের মামলায় সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার পাওয়ার আবেদনটি ন্যায্য নয়, যেখানে আবেদনকারীরা তাদের অভিযোগের জবাবে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তাদের বক্তব্যে এবং আবেদনকারী মামুন জেল পিটিশন নং ৪/২০০৬ এর ক্ষেত্রে তার উপরোক্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দোষ স্বীকার করেছে এবং অভিযোগ প্রমাণকারী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জেরা করতেও ব্যর্থ হয়েছে।
৬৬. তিনি ১৪-১১-২০০৫ তারিখের জব্দ তালিকা, যা প্রদর্শনী ১৫/১ হিসাবে চিহ্নিত, উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, ষড়যন্ত্রের ঘটনাস্থল বাড়ি থেকে ঘটনার দুই দিনের মধ্যে ১৬-১১-২০০৫ তারিখে ৩১টি জিনিস জব্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে ইসলামী আইন প্রবর্তনের আন্দোলনের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ বার্তা সম্বলিত বেশ কিছু বই, প্রতিনিধিদের রেজিস্টার, প্লাস্টিকের বাক্স, বেশ কিছু পিভিসি পাইপ, সানলাইট ব্যাটারি, এক টুকরো কাঁচ, সবুজ তার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এরপর তিনি বলেন যে, জিনিসগুলোর প্রকৃতি থেকে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, আবেদনকারীদের দ্বারা বোমা বিস্ফোরণে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সাক্ষী ২ এবং ৩ এর সাক্ষ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৬৭. এরপর সাক্ষী ২ এর সাক্ষ্য উল্লেখ করে বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল বলেন যে, তার সাক্ষ্য আবেদনকারীগণ সহ পিটিশন নং ৪৪৪/২০০৬ এর আবেদনকারীর জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তারা দুইজন বিচারকের হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল। সাক্ষী ২ কে জেরা করা হলেও তার সাক্ষ্যকে কোনোভাবেই নড়বড়ে করা যায়নি। তিনি এরপর বলেন যে, সাক্ষী ১২ তার সাক্ষ্যে সাক্ষী ২ এর সাক্ষ্য সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করলেও আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অস্বীকার করে তাকে জেরা করা হয়নি এবং তাই জনাব আলমের বক্তব্য, বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেলের মতে, কোনো কাজে আসে না। অন্যান্য আবেদনকারীদের বিষয়ে, বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেলের মতে, তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ কোনোভাবেই অন্যায় বা অবৈধ হয়েছে, এমন কোনো কিছু প্রমাণ করার জন্য আসামিদের পক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেননি। বিশেষ করে তাদের উপরোক্ত বক্তব্য এবং সাক্ষীদের জেরা করতে ব্যর্থ হওয়া, যার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য স্বীকার করা হয়েছে, সেই কারণে দোষী সাব্যস্তকরণের আদেশে কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি পুনরায় বলেন যে, আবেদনকারীরা অন্যদের মধ্যে উপরোক্ত ষড়যন্ত্রের সভায় উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি বলেন যে, আবেদনগুলো খারিজ হওয়ার যোগ্য।
৬৮. বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল বলেন যে, আবেদনকারীদের সঙ্গে দুইজন ভুক্তভোগীর কোনো শত্রুতা ছিল না এবং তবুও আবেদনকারীরা তাদের হত্যা করেছে এবং আবেদনকারীদের উল্লেখিত কারণ দেশে কথিত ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার একটি উন্মত্ত চিৎকার ছাড়া আর কিছুই নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে, বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেলের মতে, আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে আরোপিত দণ্ডগুলো সম্পূর্ণরূপে ন্যায্য।
৬৯. সবশেষে, তিনি বলেন যে, নথি থেকে দেখা যায় যে, বিচারিক আদালত বা হাইকোর্ট বিভাগ তাদের এখতিয়ার প্রয়োগে ব্যর্থ হননি বা রায়ে কোনো ত্রুটি বা অবৈধতা করেননি এবং তাই আবেদনগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং সেগুলো খারিজ হওয়ার যোগ্য।
৭০. আমরা বারের বক্তব্য বিবেচনা করেছি এবং নথিতে থাকা উপাদানগুলো পর্যালোচনা করেছি। ৭ জন দোষী সাব্যস্ত আসামির মধ্যে আসাদুল ইসলাম @ আরিফ পলাতক থাকায় কোনো আবেদন করেননি এবং তাই আমাদের সামনে ৬ জন আবেদনকারী ৬টি আবেদন দাখিল করেছেন। বিচারের সময় আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রে জড়িত হওয়ার অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়, যার ফলে ১৪-১১-২০০৫ তারিখে পূর্বচাঁদকাঠী, ঝালকাঠিতে সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে নামে দুইজন বিচারক নিহত হন এবং দণ্ডবিধির ১২০বি এবং ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়। অভিযোগের সমর্থনে রাষ্ট্রপক্ষ ৪৪ জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করে। সাক্ষী ১ মো. সুলতান আহমেদ খান, ঝালকাঠি বিচার বিভাগের গাড়িচালক, মামলার বাদী, যিনি তার সাক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমাদের দ্বারা উল্লিখিত ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন যে, ঘটনার আগে আবেদনকারী মামুনকে হাতে ব্যাগ নিয়ে দেখা যায়, যাকে ঘটনার পরে ঘটনাস্থলের কাছে রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়, যার নাম পরে মামুন বলে জানা যায় এবং তার কাছ থেকে কিছু লিফলেট উদ্ধার করা হয়, যেখানে লেখা ছিল "মানব রচিত আইন মানি না, কোরআনের আইন চালু কর’- জমিয়তুল মোজাহেদিন, বাংলাদেশ" এবং সাক্ষী কাঠগড়ায় অভিযুক্ত আবেদনকারী মামুনকে শনাক্ত করেন।
৭১. সাক্ষী ২ আনিসুর রহমান তার সাক্ষ্যে জবানবন্দি দেন যে, তিনি রূপাতলী লালদিঘীর পাড়, মৃধা বাড়িতে অনুষ্ঠিত একটি সভায় উপস্থিত ছিলেন, যেখানে মামুন এবং অন্যান্য সকল আবেদনকারী অর্থাৎ (১) শায়েখ আব্দুর রহমান, (২) বাংলা ভাই, (৩) আতাউর রহমান সানি, (৪) আব্দুল আওয়াল এবং (৫) খালেদ সাইফুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। একইভাবে, সাক্ষী ৩ মো. আবুল খায়ের, সাক্ষী ৫ রওশন আরা বেগম, সাক্ষী ৭ মো. নাজমুল হুদা লিটন, সাক্ষী ৮ উত্তম কুমার দাস, সাক্ষী ১৬ মো. সাবির হোসেন, সাক্ষী ১৭ মো. জুবায়ের, সাক্ষী ১৮ মো. একলাস মিয়া এবং সাক্ষী ২০ মো. তারেক হোসেন সবাই একবাক্যে দুইজন বিচারকের হত্যার ষড়যন্ত্রের সভায় এবং ঘটনায় আবেদনকারী মামুনের জড়িত থাকার কথা বলেন। এই প্রসঙ্গে, সাক্ষী ১১ বাদশা মিয়া এবং সাক্ষী ১৪ আব্দুল মান্নান হাওলাদার, যারা বোমা বিস্ফোরণে আহত হন, তারা তাদের সাক্ষ্যে স্পষ্ট বক্তব্য দেন যে, আবেদনকারী মামুন গাড়ির ভিতরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, যার ফলে দুইজন বিচারকের মৃত্যু হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তার পরীক্ষার উত্তরে মামুন অপরাধ স্বীকার করেন এবং বলেন যে, দুইজন বিচারককে হত্যা করতে পেরে তিনি গর্বিত বোধ করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার অধীনে রেকর্ড করা তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মামুন পুনরায় স্বীকার করেন যে, তার নেতা আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইয়ের পূর্বপরিকল্পিত পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ঝালকাঠিতে ঘটনাটি ঘটান। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সাক্ষী ৪১ মো. শফিক আনোয়ার, ঢাকার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, যখন উপরোক্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রমাণ করার জন্য জবানবন্দি দেন, তখন মামুন জবানবন্দি অস্বীকার করেননি বা জবানবন্দির স্বেচ্ছাপ্রণোদিততা বা সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে কোনো পরামর্শও দেননি। উপরোক্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তার পরীক্ষায় আবেদনকারী মামুনের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি এবং নথিতে থাকা সাক্ষ্য স্পষ্টভাবে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা প্রমাণ করে।
৭২. আসুন এখন দণ্ডবিধির ১২০বি ধারা উদ্ধৃত করি, যা নিম্নরূপ:
"১২০বি-(১) যে ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড, (যাবজ্জীবন কারাদণ্ড) বা দুই বছর বা তার বেশি মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ সংঘটনের জন্য ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অংশ হয়, যেখানে এই বিধিতে এই ধরনের ষড়যন্ত্রের শাস্তির জন্য কোনো স্পষ্ট বিধান করা হয়নি, তাকে এমনভাবে শাস্তি দেওয়া হবে যেন তিনি উক্ত অপরাধে সহায়তা করেছেন।
৭৩. এই প্রসঙ্গে, ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের সংজ্ঞা প্রদানকারী দণ্ডবিধির ১২০ক ধারাও উল্লেখ করা যেতে পারে, যা নিম্নরূপ:
"১২০ক. যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কোনো কাজ করতে বা করাতে সম্মত হয়,
(১) বেআইনি কাজ, বা
(২) বেআইনি উপায়ে বেআইনি নয় এমন কাজ, এই ধরনের চুক্তিকে ফৌজদারি ষড়যন্ত্র বলা হয়:
৭৪. সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে, বিশেষ করে ইতিমধ্যে উল্লিখিত সাক্ষী ২ এবং ১২ থেকে, এটা প্রমাণিত হয় যে, দুই বা ততোধিক ব্যক্তি অর্থাৎ আবেদনকারী মামুন অন্যান্য আবেদনকারীদের সাথে সভা করে বিচারক এবং প্রশাসনের অন্যান্যদের উপর বোমা বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র করে, যার ফলে দুইজন বিচারকের মৃত্যু হয় এবং আবেদনকারী মামুন তাদের মধ্যে একজন হওয়ায় তার কাজ দণ্ডবিধির ১২০বি ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় আসে। তাছাড়া, সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে, বিশেষ করে সাক্ষী ১ (বাদী), ১১ (বাদশা মিয়া) এবং ১৪ (আব্দুল মান্নান হাওলাদার) থেকে তার দ্বারা দুইজন বিচারকের হত্যার অপরাধ ভালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং তাই দণ্ডবিধির ১২০বি এবং ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে তার দোষী সাব্যস্তকরণে কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আবেদনকারী মামুনের আবেদনের কোনো ভিত্তি নেই।
৭৭. অন্যান্য আবেদনকারী অর্থাৎ (১) শায়েখ আব্দুর রহমান, (২) সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, (৩) আতাউর রহমান সানি এবং (৪) আব্দুল আওয়ালের বিষয়ে, ইতিমধ্যে উল্লিখিত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য উল্লেখ করা যেতে পারে। সাক্ষী ২ আনিসুর রহমান, ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে, তার সাক্ষ্যে ঘটনার আগে রূপাতলী লালদিঘীর পাড় মৃধা বাড়িতে অনুষ্ঠিত একটি সভার কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেন, যেখানে অন্যান্যদের মধ্যে উপরোক্ত আবেদনকারীরা উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষী জবানবন্দি দেন, "মিটিং এ বসিয়া শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই বলে যে, ইসলামী আইন বাস্তবায়নের জন্য ১৭ আগষ্ট সারা দেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান হইয়াছে তাহাতেও সরকারের টনক নড়ে নাই। তখন বলে যে, এখন হইতে জজ, পুলিশ প্রশাসন-এর উপর বোমা হামলা করা হইলে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন সহজ হইবে। আতাউর রহমান সানি এবং আবদুল আউয়াল তখন আমজাদকে বলে যে, কোথায় বোমা হামলা করা সহজ হইবে। জবাবে আমজাদ ভাই বলে যে, সে সব জায়গা ঘুরিয়া দেখিয়াছে বরিশাল বিভাগে ঝালকাঠি এবং বরগুনায় বোমা হামলা করা সহজ হইবে। তখন শায়খ আব্দুর রহমান সুযোগ মত বোমা হামলা করার জন্য আমজাদকে নির্দেশ দেয়া। ১/২ ঘন্টার বেশি মিটিং করিয়া নেতৃবৃন্দরা চলিয়া যয়। রাত্রে আমি মৃধা বাড়ীতেই ঘুমাই। মেহেদী ভাই টাকা না দেওয়ায় কয়েকদিন পরে গিয়া আবার দেখি যে, ঘরের দরজায় তালা লাগানো।”
এরপর তিনি আবেদনকারীদের শনাক্ত করেন। জেরা করার সময় এই সাক্ষীর কাছ থেকে তেমন কিছু বের করা যায়নি। একইভাবে, সাক্ষী ১২ মো. শামীম বাহার সাক্ষী ২ এর সাক্ষ্য সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেন। আশ্চর্যজনকভাবে, উপরোক্ত আবেদনকারীদের দ্বারা সংঘটিত ষড়যন্ত্র অস্বীকার করে এই সাক্ষীকে কোনো সাজেশনও দেওয়া হয়নি। ষড়যন্ত্রের বাড়ি থেকে জব্দ করা জিনিসপত্রের জব্দ তালিকা, যা প্রদর্শনী ১৫/১ হিসাবে চিহ্নিত, যার বিবরণ আগে দেওয়া হয়েছে, তা বোমা বিস্ফোরণের অপরাধ সংঘটনের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ বাড়িতে আবেদনকারীদের ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগকে শক্তিশালী করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যের সাথে ইতিমধ্যে উল্লিখিত এই দুই সাক্ষীর (সাক্ষী ২ এবং ১২) সাক্ষ্যে দুইজন বিচারকের মৃত্যুর ফলে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রে জড়িত হওয়ার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া, অভিযোগের জবাবে এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তাদের পরীক্ষায় তাদের কেউই রাষ্ট্রপক্ষের মামলা অস্বীকার করেননি এবং বরং অপরাধ স্বীকার করেছেন। আবেদনকারীদের উপরোক্ত স্পষ্ট স্বীকারোক্তি এবং তাদের জবানবন্দিতে সাক্ষীদের স্পষ্ট বক্তব্য স্পষ্টভাবে দুইজন বিচারকের মৃত্যুর ফলে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অপরাধে আবেদনকারীদের অংশগ্রহণ প্রকাশ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে উপরোক্ত আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আবেদনকারীদের অর্থাৎ (১) শায়েখ আব্দুর রহমান, (২) সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, (৩) আতাউর রহমান সানি এবং (৪) আব্দুল আওয়ালের আবেদনগুলো তাই ভিত্তিহীন।
৭৮. আসুন এখন ফৌজদারি পিটিশন নং ৪৪৪/ ২০০৬ এর আবেদনকারী মো. ফারুক হোসেন খান @ ফারুক @ খালেদ সাইফুল্লাহ @ আমজাদের মামলা বিবেচনা করি, যার প্রতিনিধিত্ব করছেন বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব এম. শামসুল আলম। এটা সত্য যে, তার নাম প্রথম তথ্য বিবরণীতে নেই। প্রথম তথ্য বিবরণী দায়ের করেন সাক্ষী ১ মো. সুলতান আহমেদ খান, যিনি ঘটনার সময় ঘটনাটি দেখেছিলেন, যিনি ঘটনাস্থলে আবেদনকারী মামুনকে আহত অবস্থায় দেখেন, যার কাছ থেকে কিছু আপত্তিকর লিফলেট উদ্ধার করা হয়। তিনি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সাক্ষী এবং তাই তিনি প্রথম তথ্য বিবরণীতে শুধুমাত্র অভিযুক্ত মামুনের নাম উল্লেখ করেন এবং বর্তমান আবেদনকারী ফারুক হোসেনের নাম উল্লেখ করা যায়নি। তাই এই বাদ দেওয়ার জন্য প্রতিকূল অনুমান করার কোনো কারণ নেই। তবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রকাশিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষী ১, বাদী, প্রথম তথ্য বিবরণীতে যোগ করেন "আমার দৃঢ় বিশ্বাস আসামী মামুন একজন সক্রীয় দলের সক্রীয় সদস্য। পূর্ব পরিকল্পনা করিয়া গাড়ীর মধ্যে থাকা সিনিয়র সহকারী জজদ্বয়কে বোমা মারিয়া বিস্ফোরণ ঘটাইয়া খুন করিয়াছে। একই উদ্দেশ্যে তাহার সঙ্গে অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামীরা জড়িত”। যা নিজেই কথা বলে। সাক্ষী ২ মো. আনিসুর রহমান এবং সাক্ষী ১২ মো. শামীম বাহারের সাক্ষ্য ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই আবেদনকারী ফারুক হোসেন @ আমজাদ বরিশাল বিভাগের প্রধান ছিলেন, যাকে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারক এবং পুলিশ প্রশাসনের উপর বোমা বিস্ফোরণের সুবিধাজনক স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এবং উত্তরে আমজাদ অর্থাৎ আবেদনকারী বলেন যে, ঝালকাঠি এবং বরগুনা বোমা বিস্ফোরণের জন্য উপযুক্ত হবে এবং তারপর শায়েখ আব্দুর রহমান আবেদনকারী আমজাদকে বোমা বিস্ফোরণের নির্দেশ দেন। একইভাবে, সাক্ষী ১২ মো. শামীম বাহার উপরোক্ত সাক্ষীকে হুবহু সমর্থন করেন, যা ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। জেরা করার সময় সাক্ষী ২ এর কাছ থেকে তেমন কিছু বের করা যায়নি এবং আবেদনকারীর উপরোক্ত ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে সাক্ষী ১২ কে জেরা করা হয়নি। যদিও বিজ্ঞ আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন যে, সাক্ষীদের পুলিশ যোগাড় করেছে, তবে নথিতে এমন কিছু নেই যা দেখায় যে, আবেদনকারী এবং সাক্ষীদের মধ্যে কোনো শত্রুতা ছিল বা ঘটনা অস্বীকার করে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক এখন উত্থাপিত আবেদনটি অনেক দেরিতে করা হয়েছে, যা আসামিপক্ষ কোনো পর্যায়ে উত্থাপন করেনি বা এই বিষয়ে কোনো সাজেশনও দেওয়া হয়নি।
৭৯. ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তার পরীক্ষায় আবেদনকারী স্পষ্টভাবে বলেন যে, বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে এবং দুইজন বিচারককে হত্যা করতে পেরে তিনি গর্বিত বোধ করেন। বিজ্ঞ আইনজীবী ক্রমাগত যুক্তি দেন যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তার পরীক্ষায় অভিযুক্ত আবেদনকারীর এই দোষ স্বীকারমূলক অংশ দোষী সাব্যস্তকরণের ভিত্তি হতে পারে না। এই প্রসঙ্গে তিনি শাহ আলম বনাম রাষ্ট্র ১৯৯০ বিএলডি (এডি) ২৫ মামলার সিদ্ধান্তের উল্লেখ করেছেন। দেখা যায় যে, উক্ত সিদ্ধান্তে ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং সিদ্ধান্তটি আবেদনকারীর কোনো কাজে আসে না। তাছাড়া, আমরা দেখতে পাই যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার অধীনে তার পরীক্ষায় আবেদনকারীর দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য তার দোষী সাব্যস্তকরণের জন্য একমাত্র উপাদান নয়। আমরা সাক্ষী ২ এবং সাক্ষী ১২ সহ সাক্ষীদের সাক্ষ্য পরীক্ষা করেছি। সাক্ষ্য স্পষ্টভাবে আবেদনকারীর দোষ সম্পর্কে একটি অপ্রতিরোধ্য মতামতের দিকে নিয়ে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিজ্ঞ আইনজীবীর বক্তব্যে কোনো ভিত্তি খুঁজে পাই না। এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি যে, আবেদনকারী মো. ফারুক হোসেন খান @ ফারুক @ খালেদ সাইফুল্লাহ @ আমজাদকে অভিযোগ থেকে নির্দোষ মনে করার কোনো কারণ নেই এবং তাই তার আবেদনও ভিত্তিহীন:
৮০. আমরা আপিলকৃত রায়টি পর্যালোচনা করেছি। ঘটনা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাইকোর্ট বিভাগ পর্যবেক্ষণ করেন ".......................................আলোচিত বিষয় থেকে এটা স্পষ্ট যে, আসামিরা জেনে বুঝে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ফৌজদারি ষড়যন্ত্র করে এবং ষড়যন্ত্র থেকে উৎপন্ন সাধারণ উদ্দেশ্যের অনুসরণে তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, যার ফলে দুইজন বিচারকের মৃত্যু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ সকল যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের বাইরে তাদের মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আমরা মনে করি যে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা দণ্ডবিধির ১২০বি এবং ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে অভিযোগের জন্য দোষী। তারা কোনো দয়া পাওয়ার যোগ্য নয় এবং মৃত্যুদণ্ড তাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তি।"
‘৮১. আমরা উপস্থাপনা এবং নথিতে থাকা উপাদানগুলো গভীরভাবে বিবেচনা করেছি। আমাদের মতে, মামলার ঘটনা ও পরিস্থিতি আবেদনকারীদের দ্বারা সংঘটিত ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দুইজন বিচারককে হত্যার চূড়ান্ত প্রমাণ। আবেদনকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী বিজ্ঞ আইনজীবীরা এই বিষয়ে সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, কারণ বিচারিক আদালতে তাদের পর্যাপ্তভাবে রক্ষা করা হয়নি।
৮২. জেল পিটিশন নং ৪/২০০৬ এবং ফৌজদারি পিটিশন নং ৪৪৪/২০০৬ এর আবেদনকারী মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুন এবং মো. ফারুক হোসেন খান ছাড়া অন্য আবেদনকারীরা এই আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাননি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই দেশের সকল নাগরিক এই দেশের আইন দ্বারা আবদ্ধ। দণ্ডবিধির ২ ধারা অনুযায়ী, কোনো বাংলাদেশীর করা কোনো কাজের জন্য উক্ত বিধির বিধান অনুযায়ী তার বিচার করার বিধান রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫ ধারা অনুযায়ী, দণ্ডবিধির অধীনে সকল অপরাধ ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী বিচার করা হবে। সংবিধানের ১০১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হাইকোর্ট বিভাগের এমন এখতিয়ার, ক্ষমতা এবং কার্যাবলী থাকবে যা সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দ্বারা এর উপর অর্পিত বা অর্পিত হতে পারে। ইসলামী আইনের মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগ বা এই বিভাগ দ্বারা তাদের বিষয় নিষ্পত্তি করার জন্য আবেদনকারীদের অনুরোধের উপরোক্ত বিধানগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ভিত্তি নেই। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, "আইন" শব্দের অর্থ বাংলাদেশে আইনের মর্যাদা সম্পন্ন যেকোনো আইন, অধ্যাদেশ ইত্যাদি। ইসলামী আইন অনুযায়ী তাদের মামলা বিচার করার জন্য আবেদনকারীদের অনুরোধ একটি কাল্পনিক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ শরিয়া আইন ছাড়া উক্ত তথাকথিত আইন আমাদের সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে স্বীকৃত নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে, ইসলামী আইন অনুযায়ী তাদের মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য আবেদনকারীদের অনুরোধ আমাদের আইনি বিচারব্যবস্থায় অজানা একটি অলীক ধারণা।
৮৩. ইসলাম শান্তির ধর্ম। এটি "সালাম" শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ শান্তি। ইসলামের পবিত্র নাম ব্যবহার করে, আবেদনকারীরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা বিপন্ন করে একটি বন্য উন্মত্ত সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে, যার ফলে বর্তমান মামলায় দুইজন বিচারকের হত্যার মতো নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। ইসলাম কি এমন নিরীহ মানুষ হত্যার অনুমতি দেয়? এই দেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন না করার জন্য কি সেই হতভাগ্য বিচারকরা দায়ী? বাংলাদেশে ইসলামী আইন প্রণয়ন করা কি বিচারকদের কাজ? তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো মানুষ বা কোনো প্রতিপক্ষকে হত্যার বা নিজেরা মুরতাদ হওয়ার কোনো অভিযোগও কি আছে? ধর্মের বিষয়ে ইসলাম জোরপূর্বক ব্যবহারকে উৎসাহিত করে না। আবেদনকারীরা ইসলামের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা করে যে জঘন্য নৃশংসতার আশ্রয় নিয়েছে, তা ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোরআন বলে, "................................................যে কেউ মানুষ হত্যা করে, মানুষ হত্যার বদলা অথবা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে কেউ একটি প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল......................................." সূরা ৫ : আল-মায়িদাহ : ৩২। মামলায় প্রকাশিত ঘটনাগুলো দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং একের পর এক নিরীহ মানুষ হত্যার মতো ভয়ানক অপরাধ সংঘটনের জন্য আবেদনকারীদের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করে এবং তাই তারা সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভয়ানক হুমকি। আবেদনকারীদের কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে পূর্বপরিকল্পিত, ঠান্ডা মাথার এবং ইচ্ছাকৃত, ক্রমাগত নৃশংসতা দ্বারা সমর্থিত এবং তাই সমাজ থেকে তাদের নির্মূল করাই বিদ্যমান নিয়ম রক্ষা ও সুরক্ষার একমাত্র সমাধান এবং তাই তাদের বিরুদ্ধে একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। তাই আমরা মনে করি যে, বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ সকল আবেদনকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে সঠিক কাজ করেছেন এবং হাইকোর্ট বিভাগ ঘটনা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে এবং তাই আমরা হস্তক্ষেপ বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাই না। সেই অনুযায়ী সকল আবেদন খারিজ করা হলো।
মাননীয় বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন: আমার সহকর্মী মাননীয় বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী কর্তৃক প্রদত্ত মূল রায়টি পর্যালোচনা করার সুযোগ আমার হয়েছে এবং আমি গৃহীত সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করছি। তবে, আমি বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল জনাব আব্দুর রেজা খান কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির উপর আমার নিজস্ব মতামত বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে চাই, যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. ফারুক হোসেন খান @ ফারুক @ খালেদ সাইফুল্লাহ @ আমজাদ ছাড়া অন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা আইনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঝালকাঠির দায়রা জজ কর্তৃক প্রদত্ত এবং হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক বহাল রাখা তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ড সম্পর্কে এই আদালতের কোনো বিবেচনা এবং হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।
৮৫. মামলার বিস্তারিত ঘটনা মূল রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং রায়ের সংক্ষিপ্ততার স্বার্থে আমি কোনো পুনরাবৃত্তি করা থেকে বিরত থাকছি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. ফারুক হোসেন খান @ ফারুক @ খালেদ সাইফুল্লাহ @ আমজাদ শুধুমাত্র ফৌজদারি আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন নং ৪৪৪/২০০৬ দাখিল করে এই আদালতের মাধ্যমে তার দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। অন্যান্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অর্থাৎ (১) মো. ইফতেখার হাসান @ আল-মামুন, (২) শায়েখ আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ @ এহসান মাওলানা আব্দুর রহমান, (৩) মো. সিদ্দিকুল ইসলাম @ আজিজুল ইসলাম @ ওমর আলী লিটু মিয়া @ বাংলা ভাই, (৪) মো. আতাউর রহমান @ তারিক সানি ইবনে আব্দুল্লাহ এবং (৫) আব্দুল আওয়াল @ আরাফাত @ সামাদ @ আসিফ কোনো ফৌজদারি আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন দাখিল করেননি এবং তারা শুধুমাত্র তাদের অপরাধ স্বীকার করে জেল আবেদন দাখিল করেছেন (যার বিবরণ মূল রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে), যার মূল বক্তব্য হলো তারা দেশের আইন এবং এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত আদালত দ্বারা বিচারযোগ্য নন। তবে, তারা ইসলামী বা শরিয়া আইন এবং এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত আদালত দ্বারা বিচারযোগ্য হওয়ার দাবি করেছেন। তাদের মধ্যে একটি জিনিস সাধারণ পাওয়া গেছে যে, মো. ফারুক হোসেন খান ছাড়া উপরোক্ত সকল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধ স্বীকার করে আদালতের এখতিয়ার এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডকে নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৮৬. মামলার এই পটভূমিতে, বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি-জেনারেল যুক্তি দিতে চেয়েছেন যে, যেহেতু উক্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা অপরাধ স্বীকার করেছেন, তাই তাদের উপরোক্ত জেল আবেদন দাখিল করে আইনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা উচিত নয়, যা বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত এবং হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক নিশ্চিত করা তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডের হস্তক্ষেপের দাবি রাখে।
৮৭. এই প্রসঙ্গে, এটা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে, এই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা শুধুমাত্র এই আদালতের সামনে উপরোক্ত অবস্থান গ্রহণ করেননি, বরং তারা ঝালকাঠির দায়রা জজের আদালতে এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগেও তাদের বিচারকালে একই অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তবে, বিচারিক আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগ উভয়ই আইনি স্মরণিকার ম্যানুয়ালের ১২ অধ্যায় অনুসারে তাদের মামলা রক্ষা করার জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেছিল। এমনকি এই আদালতও তার বিধি অনুসারে এই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মামলা রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেছে। এগুলো থেকে বোঝা যায় যে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের উপরোক্ত অবস্থান সত্ত্বেও বিচারিক আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগ উভয়ই তাদের পরিত্যাগ করেনি এবং দেশের আইন অনুযায়ী বিচার করা থেকে বিরত থাকেনি এবং তাই দণ্ডবিধি ২ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধি ৫ ধারা অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত অপরাধের জন্য তাদের আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে বিচার করা হয়েছে।
যেহেতু উপরোক্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা জেল আবেদন দাখিল করে তাদের পূর্বের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করে এখতিয়ারের প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন যে, দেশের আইনের অধীনে আদালতগুলোর তাদের বিচার করার এখতিয়ার ছিল না, তাই তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ এবং দণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে বলে গণ্য করা উচিত এবং তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ এবং বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত এবং দণ্ডের বৈধতা ও অবৈধতা খতিয়ে দেখার জন্য এই আদালতকে আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা উচিত। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের অধীনে তাদের নিশ্চিত মৌলিক অধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে এটা আরও বেশি প্রয়োজনীয় এবং আবশ্যক, যে আইন অনুযায়ী ছাড়া কোনো নাগরিকের জীবন, স্বাধীনতা এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ প্রতিটি নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এই শব্দটি শুধুমাত্র জীবন কেড়ে নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায় না, বরং এর অর্থ নিছক প্রাণীসত্তার চেয়েও বেশি কিছু। এর বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সেই সকল অঙ্গ ও অনুষদের মধ্যে প্রসারিত, যার মাধ্যমে জীবন উপভোগ করা হয়।
সমাপ্ত।
Info!
"Please note that while every effort has been made to provide accurate case references, there may be some unintentional errors. We encourage users to verify the information from official sources for complete accuracy."