
সতর্কীকরণ! কেস রেফারেন্স ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অধিকাংশ নজীর বিভিন্ন বই ও ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই সকল নজীর এর সঠিকতার বিষয়ে কেস রেফারেন্স ওয়েবসাইট কোন নিশ্চয়তা প্রদান করে না। কেস রেফারেন্স ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নজীর এর উপর নির্ভর এর আগে সংশ্লিষ্ট নজীরটির রেফারেন্স মিলিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
অর্থঋণ আদালত আইন অনুযায়ী কি ৬ মাসের কম বা বেশি সময়ের জন্য দেওয়ানী কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া যায়? আদালত কি বিভিন্ন দায়িকের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দিতে পারেন, নাকি সকল দায়িকের জন্য একই মেয়াদের কারাদণ্ড দিতে হবে?
এই বিষয়টি Janata Bank Limited vs Artha Rin Adalat (Spl Original) 71 DLR 487 মামলায় আলোচনা করা হয়েছে।
মাননীয় বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম এই রায়টি প্রদান করেছেন। এই মামলার পটভূমি সংক্ষেপে হলো, আবেদনকারী বাদী হিসাবে রেসপন্ডেন্ট নং ২-৬-এর বিরুদ্ধে ৬৩,৪১,৯০৭.৭১ টাকা (তেষট্টি লক্ষ একচল্লিশ হাজার নয়শত সাত টাকা এবং একাত্তর পয়সা) আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম ১ম অর্থ ঋণ আদালত এবং সাব-জজ আদালতে ১৪৯/১৯৯৩ নং অর্থ মামলা দায়ের করেন। রেসপন্ডেন্ট নং ২-৬ বিবাদী হিসাবে লিখিত বিবৃতি দাখিল করে মামলার বিরোধিতা করে এবং পক্ষগুলোর শুনানি ও রেকর্ডের প্রমাণ বিবেচনা করার পর আদালত আবেদনকারী-ব্যাংকের পক্ষে মামলায় ডিক্রি প্রদান করেন। ১৭/২০০০ নং অর্থ জারি মামলায় ডিক্রিটি জারি করা হয়। উল্লেখ্য যে, আবেদনকারী কর্তৃক দাখিল করা সম্পূরক হলফনামা থেকে হাইকোর্ট বিভাগ দেখেন যে, ২০০৩ সালের অর্থ ঋণ আদালত আইন প্রবর্তনের সাথে সাথে উক্ত অর্থ জারি মামলাটি ২০০৩ সালের ২০৬ নং অর্থ জারি মামলা হিসাবে পুনঃনামকরণ করা হয়। যাইহোক, উক্ত জারি মামলায় আবেদনকারী ব্যাংক রেসপন্ডেন্টদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে ২০০৩ সালের অর্থ ঋণ আদালত আইনের ৩৪ ধারার অধীনে একটি আবেদন দাখিল করে এবং ১৯-১০-২০১৫ তারিখে বিতর্কিত ১০৯ নং আদেশের মাধ্যমে আদালত দায়িকের বিরুদ্ধে দেওয়ানী কারাদণ্ডের আদেশ পাস করে আবেদনটি মঞ্জুর করে। দেওয়ানী কারাদণ্ডের আদেশে মূলত এই ভিত্তিতে সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রীট ফাইল করা হয় যে, অর্থ ঋণ আদালত ৩৪(১) এবং ৩৪(৩) ধারার বিধানগুলো সম্পূর্ণরূপে ভুল ব্যাখ্যা করেছেন এবং বিতর্কিত আদেশটি পাস করার ক্ষেত্রে নিজেকে ভুল পথে চালিত করেছেন।
আবেদনকারী-ব্যাংকের বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব শাহজাদা আল-আমিন কবির, আবেদন এবং বিতর্কিত আদেশটি উপস্থাপন করার পর মূলত যুক্তি দেন যে, ২০০৩ সালের অর্থ ঋণ আদালত আইনের অধীনে দেওয়ানী কারাদণ্ডের বিধান অনুসারে, আইনের ৩১(১) ধারার সাথে ৩৪(৩) ধারা পাঠ করে ৬ (ছয়) মাসের নির্ধারিত সময় ব্যতীত অন্য কোনো ভিন্ন সময়ের জন্য সাজা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিজ্ঞ আইনজীবী আরও বলেন যে, নিম্ন আদালত আইনের ভুল ধারণার কারণে একটি ত্রুটি করেছেন এবং বিতর্কিত আদেশটি পাস করেছেন।
রেসপন্ডেন্টদের দ্বারা জবাব দাখিল করে রুলের বিরোধিতা করা হয়নি।
তা যাই হোক না কেন, হাইকোর্ট বিভাগ আবেদনকারীর বিজ্ঞ আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন এবং তার যুক্তিগুলো বিবেচনা করেন। হাইকোর্ট বিভাগ বিতর্কিত আদেশ এবং রেকর্ডের অন্যান্য উপকরণগুলোও পড়েন। বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য, বিতর্কিত আদেশের আদেশ অংশটি হুবহু উদ্ধৃত কররা হয়।
"অতএব
আদেশ প্রদান করা হলো যে দায়িক নং ১ অর্থাৎ ২) মোঃ শাজাহান মোল্লা, পিতা-মৃত আলহাজ মোঃ জালাল উদ্দিন মোল্লা, ৩) মোঃ শাহ ইমরান মোল্লা, পিতা-ঐ, ৫) মোঃ জাজুল ইসলাম মোল্লা, পিতা-ঐ, ৬) মোঃ নুরুল ইসলাম মোল্লা, পিতা-ঐ, সর্ব সাং-৪৪, আসাদগঞ্জ, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-চট্টগ্রাম প্রত্যেককে ৩ (তিন) মাসের জন্য দেওয়ানী কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো এবং ৪) সাবুর নাসা বেগম, স্বামী-মৃত আলহাজ জামাল উদ্দিন মোল্লা, সাং-৪৪, আসাদগঞ্জ, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-চট্টগ্রামকে ১০ (দশ) দিনের জন্য দেওয়ানী কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।"
এখন এই বিষয়ে আইনটি দেখা দরকার। আইনের ৩৪(১) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে:
"৩৪ (১) উপধারা (১২) এর বিধান সাপেক্ষে অর্থঋণ আদালত, ডিক্রিদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে, ডিক্রির টাকা পরিশোধে বাধ্য করিবার প্রয়াস হিসাবে, দায়িককে ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখিতে পারিবে।
(৩) জারী মামলা কোন কোম্পানী (Company) যৌথ কারবারী প্রতিষ্ঠান (Firm) অথবা অন্য কোন নিগমবন্ধ সংস্থা (Corporate Body) এর বিরুদ্ধে কার্যকর করিতে বিবাদী-দায়িককে দেওয়ানী কারাগারে আটক করা আবশ্যক হইলে, উল্লিখিত কোম্পানী, যৌথ কারবারী প্রতিষ্ঠান বা নিগমবন্ধ সংস্থা আইন বা বিধি মোতাবেক যে সকল স্বাভাবিক ব্যক্তির (Natural Person) সমন্বয়ে গঠিত বলিয়া গণ্য হইবে, সেই সকল ব্যক্তি এককভাবে ও যৌথভাবে দেওয়ানী কারাগারে আটকের জন্য দায়ী হইবেন।
(৪)---------
(৫) উপধারা (১) বা (৩) এর অধীনে দেওয়ানী কারাগারে আটক কোন ব্যক্তি, ডিক্রির দাবী সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ না করা পর্যন্ত, অথবা ৬ (ছয়) মাসের সময়সীমা অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত, যাহা পূর্বে হয়, দেওয়ানী কারাগার হইতে মুক্তি লাভ করিতে পারিবে না, এবং ডিক্রির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার সঙ্গে সঙ্গে আদালত তাহাকে দেওয়ানী কারাগার হইতে মুক্তির নির্দেশ প্রদান করিবে।
(৬)--(১১)-----------
(১২) এই আইনের অধীনে কোন ডিক্রি বা আদেশ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পরিচালিত জারী মামলায়, জারী মামলার সংখ্যা একাধিক হইলেও, কোন একজন দায়িককে গ্রেফতার আটক রাখা হইলে, তাহাকে পুনর্বার গ্রেফতার করা ও দেওয়ানী কারাগারে আটক করা যাইবে না।
যদি ৩৪(১) এবং ৩৪(৫) ধারা একসাথে পড়া হয়, তবে দেখা যায় যে, অর্থ ঋণ আদালত আইন, যা একটি বিশেষ আইন, স্পষ্টভাবে সাজার সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করেছে, যে পর্যন্ত একজন ব্যক্তিকে দেওয়ানী কারাদণ্ডে আটক রাখা যেতে পারে, তা হলো ৬ (ছয়) মাস। এটি সর্বোচ্চ সাজা এবং সর্বনিম্নও, কারণ যদি ৩৪(১) ধারা দেখা হয়, যা নির্দেশ করে যে, একজন ব্যক্তিকে ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা যেতে পারে এবং তারপর ৩৪ ধারার (৫) ধারা স্পষ্টভাবে একটি বিযুক্ত পদ্ধতিতে দুটি পরিস্থিতি প্রদান করে—(১) একজন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ ডিক্রির পরিমাণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা যেতে পারে বা (২) ৬ (ছয়) মাস হেফাজতে থাকা, যা আগে হয়, অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তিকে ৬ (ছয়) মাসের জন্য দেওয়ানী হেফাজতে আটক করা হয় এবং উক্ত সময়ের মধ্যে ডিক্রির সম্পূর্ণ পরিমাণ পরিশোধ করা হয়, তবে তাকে অবিলম্বে দেওয়ানী কারাদণ্ড থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু যদি ডিক্রির পরিমাণ পরিশোধ করা না হয়, তবে তাকে ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত দেওয়ানী কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, যদি ৬ (ছয়) মাসের উক্ত সময়ের মধ্যে ডিক্রির পরিমাণ আদায় করা না যায়, তবে দায়িককে ৬ (ছয়) মাসের দেওয়ানী কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেওয়ানী হেফাজতে থাকতে হবে, এর বেশি কিছু নয়, এর কম কিছু নয়।
তারপর আবার ৩৪(১২) ধারা আইনের উক্ত পরিকল্পনাকে আরও শক্তিশালী করে, কারণ এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, যদি উক্ত ব্যক্তি ইতিমধ্যে পূর্ণ মেয়াদের জন্য দেওয়ানী কারাগারে থাকে, তবে কোনো ব্যক্তিকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা এবং দেওয়ানী কারাগারে আটক করা হবে না। হাইকোর্ট বিভাগ উপরে "পরিপূর্ণ মেয়াদের জন্য" বাংলা শব্দটিও চিহ্নিত করেন। অতএব, "পরিপূর্ণ মেয়াদের জন্য" শব্দ এবং বাক্যাংশগুলো প্রতিটি কারণে শুধুমাত্র ৬ (ছয়) মাসের সময়কাল বোঝাবে। সেই বিষয়ে আইনে কোনো অস্পষ্টতা নেই। এটি ছাড়া অন্য কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে না। এটি একমাত্র আক্ষরিক ব্যাখ্যা, যা ২০০৩ সালের আইনের ৩৪ ধারার পরিকল্পনা থেকে সামগ্রিকভাবে ভালোভাবে বোঝা যায়। নিম্ন আদালত উক্ত বিধানগুলো ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে ভুল পথে চালিত করেছেন এবং বিভিন্ন মেয়াদের দেওয়ানী কারাদণ্ডের সাজা দিয়ে আইনের ত্রুটি করেছে, যা ৪ (চার) জন রেসপন্ডেন্টের জন্য ৬ (ছয়) মাস হওয়া উচিত ছিল।
ফলে, রুলটি চূড়ান্ত করা হয়। বিতর্কিত আদেশটি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই পাস করা হয়েছে এবং এর কোনো আইনি কার্যকারিতা নেই বলে ঘোষণা করা হয় এবং বাতিল করা হয়। উপরোক্ত পর্যবেক্ষণগুলোর আলোকে এবং ২০০৩ সালের আইনের ৩৪ ধারার অন্যান্য বিধানগুলো বিবেচনা করে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে এই আদেশ প্রাপ্তির পর নিম্ন আদালতে একটি নতুন সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য মামলাটি ফেরত পাঠানো হয়।
Info!
"Please note that while every effort has been made to provide accurate case references, there may be some unintentional errors. We encourage users to verify the information from official sources for complete accuracy."